প্রকাশিত: ০৩/০৬/২০২০ ১০:৩৩ এএম , আপডেট: ০৩/০৬/২০২০ ১০:৩৫ এএম

মাসুদ হোসেন, পুলিশ সুপার কক্সবাজার ::

করোনা ভাইরাস সংক্রমনের দিক দিয়ে কয়েকটি বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে কক্সবাজার জেলার অবস্থান। এখানে এখন শত শত লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্তের দিক দিয়ে আবার কক্সবাজার শহর শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু মানুষের জীবনাচরণ দেখে উপায় নাই এই পর্যটন নগরী কতটা ঝুঁকিপূর্ণ!! সেই প্রথম থেকেই জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, সেনাবাহিনী, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, সরকারি অন‍্যান‍্য সংস্থা, রাজনৈতিক ব‍্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজসহ অনেকেই দিনরাত অনবরত কাজ করে যাচ্ছে, প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটি রয়েছে। সম্মানিত সিনিয়র সচিব হেলাল স‍্যারের সার্বিক নির্দেশনা ও তদারকিতে আমরা কাজ করছি। জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের কমিটির সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করেন। সেই মিটিং কখনো সামনাসামনি আবার কখনো ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। হেলাল স‍্যারের সাথে আমাদের নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্স হয়ে থাকে। এসব মিটিংয়ে সরকারের নির্দেশনার আলোকে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সর্বোচ্চ সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে করোনা আক্রান্ত ব‍্যক্তিদের সেবা দেওয়া কিংবা লকডাউন বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনেকেই বুঝতে চান না যে আসলে আমরা এই মহামারীর পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সেই প্রথম থেকে ব‍্যাপক প্রচার প্রচারণা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক কার্যক্রম নেওয়া সত্ত্বেও মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না। আমরা ব‍্যক্তিগতভাবে অনেকে অনেক রকম চিন্তা করতে পারি। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে সকলের কথা চিন্তা করে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। লকডাউন শিথিল করা হয়েছে মানে এই নয় যে ছোট খাটো উছিলায় ঘরের বাইরে বের হবো! কে শোনে কার কথা!! এখনো দোকানে বসে বন্ধুকে ডেকে এনে জমজমাট গল্প চলছে, যারা কেনাকাটা করছেন তারা একজন আরেকজনের গায়ের উপর দাড়িয়ে কেনাকাটা করছেন। ব‍্যাংকের ডিপিএস এর কিস্তি জমা দেওয়ার জন্য গাদাগাদি করে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিচ্ছেন। সময় মতো ডিপিএসের কিস্তি জমা না দিলে ২০/৫০ টাকা জরিমানা হবে, সেটা বড় না জীবন বড়? মহল্লার গলির মোড়ে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। সামান্য ছুতায় রাস্তায় হাটাহটি করছেন। পুলিশের গাড়ি দেখলে লুকিয়ে আড়ালে চলে যাচ্ছে। অনেকে নিজে করোনা ভাইরাস পজিটিভ জেনেও বা উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও তা গোপন রেখে হাটবাজারে মাছ তরকারি কিনছেন, মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছেন। মানুষের চেহারা দেখলে বুঝাই যায়না এই শহরের উপর দিয়ে কি বিপর্যয় বয়ে যাচ্ছে! এর মধ্যে আবার কিছু লোক খবর নিচ্ছেন ফ‍্যামিলিসহ কিভাবে কক্সবাজার বেড়াতে আসা যায়! সেদিন ঘূর্ণিঝড় আম্ফান দেখার জন্য সাগর পাড়ে শত শত লোক ভিড় করেছিলেন। শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে লোকজন ঘরে ফিরে গেছেন।

কক্সবাজারে যারা এই যুদ্ধে সামনের সারিতে কাজ করছেন সেই চিকিৎসক, পুলিশ, প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারী, রাজনৈতিক ব‍্যক্তিবর্গ আক্রান্ত হয়েছেন। এভাবে চললে এসব সংস্থা আপনাকে আর বেশি দিন সার্ভিস দিতে পারবে না। ইতমধ্যে শহরের কয়েকজন সম্ভাবনাময় তরুণ মারা গেছেন। আমাদের হাতে সময় কম। পুলিশকে এখন লকডাউন নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সময় দিতে হচ্ছে। বাচতে হলে অন‍্যের বলার আগেই নিজে সচেতন হওয়ার প্রানপণ চেষ্টা করি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে মানার চেষ্টা করি। নিজে নিরাপদ থাকি, অন‍্যকে নিরাপদ রাখি।

 

মাসুদ হোসেন,

পুলিশ সুপার

কক্সবাজার ::

পাঠকের মতামত

আসলে কি বয়কট করছি!

আমরা বাঙালি নতুন ইস্যু পেলে দৌড়ে তা দেখার জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করি। আজ বয়কট নিয়ে ...